মেডিটেশন:ব্রেনের ব্যায়াম, মনের শান্তি!

মেডিটেশন যার বাংলা রূপ ‘ধ্যান’ বা ‘মননচর্চা’, একটা মানসিক প্রশান্তি ও একাগ্রতা অনুশীলন।
নিউজে লক্ষ্য করা যাচ্ছে—আবারও কোভিডের প্রকোপ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে নিজের ইমিউনিটি ধরে রাখার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমরা অনেকেই হেলদি ডায়েট ও এক্সারসাইজ মেনে চলছি, কিন্তু বারবার আলোচনায় আসছে একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস — মেডিটেশন।

মেডিটেশন কী?
এটা একটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সহজ পদ্ধতি, যা দেহ, মন এবং ব্রেনকে শিথিল করে। শুধু মানসিক চাপ কমায় না, বরং সারা শরীরেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কিছু উপকারিতা:
1.গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন করলেই করটিসল (Cortisol) নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

2.ইমিউন ফাংশন বাড়ায়-নিয়মিত মেডিটেশন ইমিউন সেল কার্যকারিতা বাড়ায়, যার ফলে শরীর ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালোভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

3.মনোযোগ ও ফোকাস উন্নত করে-মাত্র ২ সপ্তাহের নিয়মিত মেডিটেশন মস্তিষ্কের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স (যেটি মনোযোগ, স্মৃতি ও চিন্তার সঙ্গে যুক্ত) সক্রিয় করে তোলে।

4.ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি কমায়-MBSR (Mindfulness-Based Stress Reduction) মেডিটেশন প্রোগ্রাম মানসিক অবসাদ ও উদ্বেগ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর।

মেডিটেশনের উপযুক্ত সময় :

১। সকালে (ঘুম থেকে উঠার ৩০–৬০ মিনিটের মধ্যে):

– গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই থেটা (theta) থেকে আলফা (alpha) ব্রেইনওয়েভে প্রবেশ করে, যা গভীর মনঃসংযোগের জন্য উপযুক্ত।

– সকালে মেডিটেশন করলে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ে এবং সারাদিনের জন্য একধরনের প্রশান্ত ও ফোকাসড মন তৈরি হয়।

২। রাতে (ঘুমের আগে):

– রাতে মেডিটেশন করলে করটিসলের (Cortisol) মাত্রা কমে, হার্ট রেট ধীরে হয় এবং ঘুমের মান উন্নত হয়।

– দিনের মানসিক চাপ কমাতে এবং মস্তিষ্ককে ‘ডি-কম্প্রেস’ করতে অত্যন্ত কার্যকর।

৩। দুপুরে (স্ট্রেস বা ব্রেক টাইমে):

মাত্র ৫–১০ মিনিটের ‘মাইন্ডফুলনেস’ ব্রেক মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করে মনোযোগ ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়ায়।

কিভাবে মেডিটেশন করবেন ?

১। একটি শান্ত পরিবেশ বেছে নিন:
টিভি, ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে নিরিবিলি জায়গায় বসুন। অতিরিক্ত আয়োজনের দরকার নেই—শুধু নীরবতা যথেষ্ট।

২। সোজা হয়ে আরামদায়কভাবে বসুন:
মেঝেতে ক্রস-লেগড বা চেয়ারে সোজা হয়ে বসতে পারেন। সঠিক ভঙ্গিমা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ঠিক রাখে এবং মনোযোগ বাড়ায়।

৩। চোখ বন্ধ করে প্রাকৃতিকভাবে নিঃশ্বাস নিন:
শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিতে মন দিন—শুধু অনুভব করুন। মন অন্যদিকে চলে গেলেও আস্তে করে আবার মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন নিঃশ্বাসে।

কম সময় দিয়ে শুরু করুন, নিয়মিত থাকুন:


শুরু করুন মাত্র ৫ মিনিট দিয়ে, কিন্তু নিয়মিত করুন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই ছোট অভ্যাসটিই মস্তিষ্কের গঠন পরিবর্তন করে—গ্রে ম্যাটার বৃদ্ধি, মানসিক স্থিতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

” Consistency over duration.”
মেডিটেশন শুধুই অস্থির মনের মানুষের জন্য নয়, নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন —এটা আত্মনির্ভরতা, মানসিক শান্তি ও ফোকাস বাড়ানোর এক অসাধারণ উপায়।


মেডিটেশন মানে শুধু নিরব বসে থাকা নয়—এটা একটা সায়েন্টিফিক মানসিক অনুশীলন, যা মন ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।এর মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ইতিবাচক চিন্তার জগৎ তৈরি হয় এবং হতাশা ও নেতিবাচকতা থেকে ধীরে ধীরে মুক্তি মেলে। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিটের চর্চাই মনকে স্থির, শান্ত ও প্রোডাক্টিভ রাখার জন্য দারুণ কার্যকর।

Stay mindful. Stay strong.

সূত্র : Journal of Health Psychology, 2016

সূত্র: Psychosomatic Medicine, 2003

সূত্র: Cognitive, Affective, & Behavioral Neuroscience, 2007

সূত্র: JAMA Internal Medicine, 2014

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *